আমাদের চারপাশে সচরাচর যে সব উদ্ভিদ আমরা দেখে থাকি এদের অধিকাংশেই কোনো না কোন সময় ফুল ফোটে। এরা সপুষ্পক উদ্ভিদ বা Phanerogamia. এমন অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের কখনও ফুল হয় না এবং অল্প কিছু ছাড়া আমাদের চোখে তেমন একটা পড়েওনা । এরা অপুষ্পক উদ্ভিদ বা Cryptogamia. Bryophyta ও Pteridophyta গ্রুপের উদ্ভিদগুলো হচ্ছে → অপুষ্পক উদ্ভিদ। তবে বৈশিষ্টে ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা অপেক্ষা অনুন্নত । Bryophyta ও Pteridophyta-র মধ্যে বাহ্যিক মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে Bryophyta উদ্ভিদগুলোকে সত্যিকার মূল, কাণ্ড ও পাতায় ভাগ করা যায় না। কিন্তু Pteridophyta কে মূল,কান্ড ও পাতায় ভাগ করা যায়। তাছাড়া Bryophyta অভাস্কুলার কিন্তু Pteridophyta ভাস্কুলার উদ্ভিদ ।
Selaginella
Pteris
Equisetum
Riccia
স্টাইপ
রাইজোম
রাইবোসোম
কোনটিই নয়
ব্রায়োফাইটা বা মসবর্গীয় উদ্ভিদঃ দুটি গ্রিক শব্দ Bryon অর্থ মড এবং Phyton অর্থ উদ্ভিদ হতে ব্রায়োফাইটা নামকরণ করা হয়। বিজ্ঞানী ব্রাউন ১৮৬৪ সালে এটির নামকরণ করেন। ❝যেসব ভ্রূন উৎপন্নকারী গ্যামেটোফাইটিক সদস্য পরিবহন টিস্যুবিহীন,থ্যালয়েড বা কোমল কান্ড ও পাতা যুক্ত,রাইজয়েডযুক্ত,বহুকোষী জননাঙ্গ ধারন করে ও জননকোষ এর চারপাশে বন্ধ্যা আবরণ থাকে তাদেরকে ব্রায়োফাইটা বলে।❞ এ বিভাগে ২৪০০০ প্রজাতি আছে। বাংলাদেশে ২৪৮ টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। ব্রায়োফাইটাকে উচ্চতর উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। যা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্তঃ ক.হেপাটিসি
খ.অ্যান্থোসিরোটি
গ.মাসাই
ব্রায়োফাইটা বৈশিষ্ট্যঃ
*এরা বহুকোষী উদ্ভিদ। এরা অপুষ্পক ও অবীজী অর্থাৎ এদের ফুল, ফল ও বীজ হয় না।
*এদের দেহ গ্যামিটোফাইট (gametophyte) তথা হ্যাপ্লয়েড। গ্যামিটোফাইট সর্বদাই স্বতন্ত্র ও স্বভোজী উদ্ভিদ।
*দেহ থ্যালয়েড অর্থাৎ দেহকে সত্যিকার মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না, তবে মস জাতীয় উদ্ভিদকে ‘নরম কান্ড ও পাতার’ মতো অংশে চিহ্নিত করা যায়।
*এদের মূল নেই, তবে মূলের পরিবর্তিত এককোষী রাইয়জেড (rhizoid) এবং কোনো কোনো প্রজাতিতে বহুকোষী স্কেল (scale) থাকে।
*এদের দেহে কোনো ভাস্কুলার টিস্যু নেই। দেহ প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত।
*এদের জননাঙ্গ বহুকোষী এবং বন্ধ্যাকোষাবরণ দিয়ে আবৃত।
*স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম এবং পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়ামের আকৃতি ফ্লাস্কের মতো এবং অ্যান্থেরিডিয়ামের আকৃতি গোলাকার, নাশপাতির মতো, বেলনাকার বা গদাকার হয়ে থাকে।
* যৌন জনন উগ্যামাস প্রকৃতির অর্থাৎ বড় নিশ্চল স্ত্রী গ্যামিটের (ডিম্বাণু) সাথে ক্ষুদ্র ও সচল পুং গ্যামিটের (শুক্রানু) মিলন ঘটে।
*শুক্রানু দ্বিফ্ল্যাজেলা বিশিষ্ট।
*নিষেকের জন্য জলীয় মাধ্যমের প্রয়োজন।
*এদের ভ্রুণ বহুকোষী, ভ্রূণ স্ত্রী জননাঙ্গের অভ্যন্তরে থাকে।
*জীবনচক্রে গ্যামিটোফাইট প্রধান এবং স্পোরোফাইট গৌণ।
*স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে সরাসরি থ্যালাস গঠন বা প্রোটোনেমা উৎপন্ন করে।
Riccia: Riccia spজন্মে থাকে এবং বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু ক্ষুদ্রাকার বলে আমরা এদেরকে সাধারণত লক্ষ্য করি না, চিনিও না। এদের সাথে আমরা তেমন পরিচিত নই।
Riccia একটি বড় গণ। প্রায় ২০০টি প্রজাতি নিয়ে এই গণ গঠিত। এর মধ্যে শুধুমাত্র Riccia fluitans ভাসমান জলজ। Hepaticae শ্রেণির ব্রায়োফাইটস সদস্যদেরকে লিভারওয়ার্ট (Liverwort) বলে।
এদের দেহ অর্থাৎ থ্যালাসের আকৃতি মানুষের লিভার (যকৃত)-এর সাথে কিছুটা মিল সম্পন্ন হওয়াতে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে Riccia গণের ৪৫টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন প্রজাতির মধ্যে R. bengalensis, R. dhakensis, R. chittagonensis, R. gangestica, R. personii উল্লেখযোগ্য ।
আবাসস্থলঃ
Riccia গণের বিভিন্ন প্রজাতি স্যাঁতসেঁতে মাটিতে, আর্দ্র প্রাচীরের গায়ে জন্মে থাকে। নদীতীরে বালিতে Riccia জন্মিতে দেখা যায়। Riccia fluitans ছোট ছোট ডোবা-পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। বর্ষাকালেই Riccia অধিক জন্মায়।
শ্রেণিবিন্যাস (Classification) :
Kingdom : Plantae
Grade: Bryophyta
Division : Bryophyta
Class: Hepaticae
Order : Marchantiales
Family : Ricciaceae
Genus : Riccia
বাহ্যিক গঠন বৈশিষ্ট্য (External structure features) :Riccia গ্যামিটোফাইটিক উদ্ভিদ। এদের দেহ থ্যালয়েড অর্থাৎ দেহকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না। থ্যালাসটি সবুজ, শায়িত এবং বিষমপৃষ্ঠ। থ্যালাস দ্ব্যাগ্র শাখাবিশিষ্ট । সাধারণত কতগুলো Riccia থ্যালাস একত্রে গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাকার চক্র করে অবস্থান করে। এই অবস্থাকে রোজেট বলে।
Riccia থ্যালাসের বাহ্যিক গঠণঃ
Riccia, Hepaticae শ্রেণির অন্তর্গত একটি গণ। Riccia উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই থ্যালাসের উপর পৃষ্ঠে লম্বালম্বিভাবে মধ্যশিরা আছে এবং শিরা বরাবর লম্বা খাঁজ (dorsal furrow) আছে। থ্যালাসের প্রতিটি শাখার শীর্ষে একটি খাঁজ আছে, একে অগ্রন্থ খাঁজ (apical notch) বলে। থ্যালাসের নিচের পৃষ্ঠ থেকে বহুকোষী স্কেল এবং এককোষী রাইজয়েড সৃষ্টি হয়। রাইজয়েড মসৃণ এবং অমসৃণ (smooth & tuberculate)-এ দু’প্রকার হয়। থ্যালাসকে মাটির সাথে আটকিয়ে রাখা এবং মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করা স্কেল ও রাইজয়েড এর কাজ। Riccia-এর স্পোরোফাইট সর্বাপেক্ষা সরল এবং সম্পূর্ণরূপে গ্যামিটোফাইটের উপর নির্ভরশীল। স্পোরোফাইট শুধুমাত্র গোলাকার ক্যাপসিউল-এ গঠিত যা থ্যালাসে নিমজ্জিত থাকে।
Riccia-র অভ্যন্তরীণ গঠন (থ্যালাসের প্রস্থচ্ছেদ)
Internal structure (Cross-section of Thalamus) :
প্রস্থচ্ছেদে থ্যালাসকে তিনটি পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত দেখা যায় :
• উপরের দিকে ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত ফটোসিনথেটিক বা আত্তীকরণ অঞ্চল।
• নিচের দিকে বর্ণহীন সঞ্চয়ী অঞ্চল
• এবং নিম্নত্বক।
ফটোসিনথেটিক বা আত্তীকরণ অঞ্চল (Photosynthetic or assimilatory zone) :
থ্যালাসের উপরের দিকে ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত খাড়া কোষের সারি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলে ফটোসিনথেসিস হয় এবং খাদ্য তৈরি হয়। ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত এ সারিগুলোকে আত্তীকরণ সূত্র (assimilatory filament) বলে। এসব আত্তীকরণ সূত্রের মধ্যবর্তী সরু ও লম্বা নালীর ন্যায় বায়ুপূর্ণ স্থানকে বায়ু প্রকোষ্ঠ (air chamber) বলে। প্রতিটি বায়ু প্রকোষ্ঠ একটি ছিদ্রপথে বাইরের সাথে উন্মুক্ত থাকে। এ ছিদ্রপথকে বায়ুছিদ্র (air pore) বলে। আত্তীকরণ সূত্রের বাইরের কোষগুলো কিছুটা বড় ও ক্লোরোপ্লাস্টবিহীন থাকে। বর্ণহীন এ কোষগুলো থ্যালাসের উপরিভাগে একটি অসম্পূর্ণ ঊর্ধ্বত্বক (upper epidermis) গঠন করে। বর্ণহীন একসারি কোষ দিয়ে থ্যালাসের ঊর্ধ্বত্বক গঠিত।
•সঞ্চয়ী অঞ্চল (storage zone) :
থ্যালাসের ফটোসিনথেটিক অঞ্চলের নিচে এ অঞ্চল অবস্থিত। এ অঞ্চলটি কয়েক সারি বর্ণহীন প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত এবং সাধারণত আন্তঃকোষীয় ফাঁক বিবর্জিত। এ সকল কোষে প্রচুর শ্বেতসার কণা সঞ্চিত থাকে।
• নিম্নত্বক (Lower skin) :
একসারি কোষ দিয়ে নিম্নত্বক গঠিত। নিম্নত্বক সুগঠিত। নিম্নত্বক থেকে বহু এককোষী রাইজয়েড ও বহুকোষী শল্ক বা স্কেল নির্গত হয়। রাইজয়েড দুই ধরনে; যথা- মসৃণ ও অমসৃণ।
Riccia র জনন পদ্ধতিঃ
•অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) :
থ্যালাসের পেছনের অংশ মরে গেলে অগ্রভাগের প্রতিটি শাখা স্বতন্ত্র Riccia উদ্ভিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাইজয়েডের অগ্রভাগে গিমা (gemma) এবং থ্যালাসের উপর টিউবার (tuber) জাতীয় উপবৃদ্ধি সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
•যৌন জনন (Sexual reproduction) :
Riccia-র পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম এবং স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। নাশপাতি আকৃতির অ্যান্থেরিডিয়ামে দ্বিফ্যাজেলাবিশিষ্ট শুক্রাণু এবং ফ্লাস্ক আকৃতির আর্কিগোনিয়ামে নিশ্চল ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণু পরিস্ফূটিত হয়ে সরল ও গোলাকার স্পোরোফাইট গঠন করে। স্পোরোফাইট ক্যাপসিউলে সীমাবদ্ধ থাকে। এর মধ্যে স্পোর উৎপন্ন হয়। স্পোরগুলো আকার-আকৃতিতে একইরূপ হয় অর্থাৎ হোমোস্পোরাস। অনুকূল পরিবেশে স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে তরুণ Riccia থ্যালস গঠন করে।
মাটিতে
গাছের উপরে
পুরাতন দেওয়ালে
জলাশয়ে
Riccia-র শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ
*উদ্ভিদ দেহ গ্যামিটোফাইটিক ও থ্যালয়েড ( মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয়)।
*থ্যালাস সবুজ, শায়িত, চ্যাপ্টা, বিষমপৃষ্ঠ ও দ্ব্যাগ্র শাখাবিশিষ্ট এবং প্রতি শাখার মাথায় খুঁজযুক্ত।থ্যালাসের অঙ্কীয়দেশে, মসৃণ ও অমসৃণ রাইজয়েড এবং বহুকোষী স্কেল বা শল্ক থাকে।
*স্পোরোফাইটিক দশা সরল প্রকৃতির এবং গ্যামিটোফাইটের উপর নির্ভরশীল।
*অভ্যন্তরীণ টিস্যু উপরের পৃষ্ঠের দিকে দণ্ডাকার (ফাঁকে ফাঁকে বায়ু প্রকোষ্ঠযুক্ত) ফটোসিন্থেটিক অঞ্চল এবং নিচের পৃষ্ঠের দিকে অবিচ্ছিন্ন কোষের সঞ্চয়ী অঞ্চল এ বিভক্ত।
*স্ত্রীজননাঙ্গ আর্কিগোনিয়াম, পুংজননাঙ্গ অ্যাস্থেরিডিয়াম এবং স্পোরোফাইট হোমোস্পোরাস।
*আর্কিগোনিয়াম দেখতে ফ্লাস্কের মতো এবং অ্যান্থেরিডিয়ামের দেখতে নাশপাতির মতো; গোলাকার, ডিম্বাকার বা বেলনাকার।
টেরিডোফাইটা বা ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদঃপক্ষল বা ডানাবিশিষ্ট উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে Pteridophyta বলে। Pteron অর্থ পক্ষল বা ডানা এবং Phyton অর্থ উদ্ভিদ থেকে Pteridophyta শব্দের উৎপত্তি। এদের ফার্ন বর্গীয় উদ্ভিদ ও বলা হয়।এদের দেহে ভাস্কুলার ক্রিপটোগ্যামাস থাকে।অপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যেএরা সবচেয়ে উন্নত।পৃথিবীতে এর ৪০০ টি গণের ১০,০০০টি প্রজাতি রয়েছে।বাংলাদেশে ৪১ টি গোত্রের ১৯৫ টি টেরিডোফাইটা রয়েছে। এরা পরাশ্রয়ী।তবে কিছু প্রজাতি ভাসমান জলজ ও আর্দ্র স্থলজ পরিবেশে জন্মায়।
টেরিডোফাইটার বৈশিষ্ট্যঃ
*এরা অপুষ্পক, অবীজী উদ্ভিদ।
*এদের প্রধান দেহটি স্পোরোফাইট বা রেণুধর অথ্যাৎ ডিপ্লয়েড(2n)।
*এদের দেহ মূল,কান্ড ও পাতায় বিভক্ত।
*এরা স্বাধীন এবং বীরুৎ প্রকৃতির(ট্রি ফার্ন ছাড়া)।
*দেহ জাইলেম ও ফ্লোয়েম দিয়ে গঠিত ভাস্কুলার বান্ডল দিয়ে গঠিত।
*এদের জননাঙ্গ বন্ধ্যাকোষের আবরণ দিয়ে আবৃত
*এদের স্ত্রী গ্যামেট নিশ্চল বা আর্কিগোনিয়াম উৎপন্ন হয় এবং সচল পুং গ্যামেট বা অ্যান্থেরিডিয়াম উৎপন্ন হয়।
*স্পোরোফাইটে স্পোর উৎপন্ন হয় যা হোমোস্পোরাস বা হিটারোস্পোরাস হতে পারে।
*জীবনচক্রে সুনির্দিষ্ট হিটারোমরফিক জনুক্রম বিদ্যমান।
Pteris এর শ্রেণিবিন্যাসঃ
Kingdom: Plantac
Grade: Tracheophyta
Division: Filicinophyta
Class: Filicineae
Order : Filicales
Family: Polypodiaceae
Genus: Pteris
Pteris এর বৈশিষ্ঠ্যঃ
১. Pteris একটি স্থলজ ফার্ন জাতীয় স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ।
২. এর দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত।
৩. কাণ্ড রাইজোম (rhizome)-এ রূপান্তরিত হয়।
৪. রাইজোম র্যামেন্টা (ramenta) দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে।
৫. পাতা যৌগিক ও কচি অবস্থায় কুণ্ডলিত।
৬. স্পোরাঞ্জিয়া একত্রিত হয়ে পত্রকের কিনারায় সোরাস (sorus) গঠন করে: স্পোরাঞ্জিয়াম মেকী ইন্ডুসিয়াম (false indusium) দিয়ে ঢাকা থাকে।
৭. প্রোথ্যালাস (গ্যামেটোফাইট) সবুজ বর্ণের, হৃৎপিণ্ডাকার ও সহবাসী।
আবাসস্থল : Pteris একটি বহুল পরিচিত, বহুবর্ষজীবী স্থলজ ফার্ন জাতীয় বীরুৎ উদ্ভিদ। সাধারণত স্যাঁতসেঁতে, ঠাণ্ডা ও ছায়াঘন পরিবেশে এটি প্রচুর জন্মে। পুরাতন ও ভগ্নপ্রাচীরের গায়ে এবং ফেলে রাখা ইটের স্তূপেও এদের জন্মাতে দেখা যায় । খোলা ও উন্মুক্ত জায়গা অর্থাৎ রোদ পছন্দ করে বলে এরা সানবার্ন (shirtieri) নামে পরিচিত। Pteris গণে প্রায় ২৫০টি প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে ১৬টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় Pteris vittata.
Pteris-এর দৈহিক গঠন (Vegetative structure of Pteris)
Pteris এর প্রধান উদ্ভিদ রেণুধর বা স্পোরোফাইটিক বা ডিপ্লয়েড। এদের দেহ মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত। কাণ্ড রাইজোম (rhizome) (রূপান্তরিত ভূনিম্নস্থ কাণ্ড) জাতীয় এবং আবাসভূমির কয়েক সেন্টিমিটার গভীরে জন্মায়। এটি দেখতে লম্বা এবং এর বৃদ্ধি অনির্দিষ্ট। রাইজোমের নিম্নতল হতে সূক্ষ্ম স্বল্প শাখাযুক্ত অস্থানিক মূল গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা চির সবুজ এবং পক্ষল যৌগিক। ফার্নের পাতাকে ফ্রন্ড (frond) বলে।
মুকুল অবস্থায় পাতা কীভাবে বিন্যস্ত থাকে তাকে বলা হয় ভার্নেশন বা মুকুলপত্র বিন্যাস। ফার্নের পাতা মুকুল অবস্থায় কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে যাকে বলা হয় সারসিনেট ভার্নেশন (circinate vernation)। কুণ্ডলিত কচি পাতাকে ক্রোজিয়ার (crozier) বলে। পত্র যৌগপত্র এবং প্রতিটি পত্রকখণ্ডকে পিনা (pina) বলে।
পিনা প্রায় অবৃন্তক, সাধারণত অপজিট কখনো কখনো কিছুটা একান্তরভাবে অবস্থিত থাকে। প্রতিটি পিনা অবৃন্তক, সরু লম্বাটে (linear shaped) এবং কিনারা মসৃণ। শীর্ষক পিনা সর্বাধিক লম্বা। পত্রের র্যাকিস-এর নিম্নপ্রান্ত এবং রাইজোম এক প্রকার অসংখ্য বাদামি রঙের শল্কপত্র দিয়ে আবৃত থাকে। শল্কপত্রকে র্যামেন্টাম (ramentum) বলে। পরিণত পত্রকের নিম্নতলের কিনারায় সোরাই (sori) উৎপন্ন হয়।
Pteris-এর অভ্যন্তরীণ গঠন (Internal structure of Pteris):
রাইজোমের (কাণ্ড) অন্তর্গঠন (The structure of rhizome) : রাইজোম কাণ্ডের সর্ববাইরে প্যারেনকাইমা কোষের একস্তর বিশিষ্ট এপিডার্মিস বা বহিঃত্বক অবস্থিত। বহিঃত্বক দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় দুস্তর বিশিষ্ট হাইপোডার্মিস (অধঃত্বক) এবং হাইপোডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় বহুস্তর বিশিষ্ট কর্টেক্স অবস্থিত। কর্টেক্স-এ একাধিক ভাস্কুলার বান্ডল আছে। ভাস্কুলার বান্ডল হ্যাড্রোসেন্ট্রিক (hadrocentric) কারণ এর কেন্দ্রে জাইলেম এবং এর চারদিকে ফ্লোয়েম অবস্থিত।
র্যাকিস-এর অন্তর্গঠন (The structure of rachis) :
র্যাকিসের প্রস্থচ্ছেদে বাইরে এপিডার্মিস, এপিডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় স্ক্লেরেনকাইমা কোষের হাইপোডার্মিস (অধঃত্বক) অবস্থিত। হাইপোডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় বহুস্তর বিশিষ্ট কর্টেক্স অবস্থিত এবং কর্টেক্স টিস্যুতে অশ্বক্ষুরাকৃতির স্টিলি (পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ) অবস্থিত। ভাস্কুলার বান্ডল হ্যাড্রোসেন্ট্রিক।
পত্রকের অন্তর্গঠন (The structure of leaf) :
দীর্ঘাকার পত্রকের প্রস্থচ্ছেদ করলে দেখা যায়, ঊর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বক উভয়ই একসারি কোষ দিয়ে গঠিত। ঊর্ধ্বত্বকে কিউটিকল এবং নিম্নত্বকে পত্ররন্ধ্র বিদ্যমান। উভয় ত্বকের মাঝখানে মেসোফিল স্তর বিদ্যমান। এখানে স্পঞ্জি ও প্যালিসেড প্যারেনকাইমা বিদ্যমান। মেসোফিল প্যারেনকাইমা কোষগুলো ক্লোরোফিল যুক্ত এবং বায়ুগহ্বর বিশিষ্ট হয়। স্টিলি জাইলেম কেন্দ্রিক। মধ্যশিরা অঞ্চলে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডল বিদ্যমান যা পরিচক্র (pericycle) ও অন্তত্বক (endodermis) যুক্ত হয়ে থাকে।
Pteris-এর জনন (Reproduction of Pteris)
Pteris উদ্ভিদ অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এদের মধ্যে। স্পোরোফাইট উদ্ভিদে অঙ্গজ ও অযৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এবং গ্যামিটোফাইট উদ্ভিদে যৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।
১। অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) :
অনেক সময় পরিণত রাইজোমের অংশ বিশেষ মরে যায় এবং অপরিণত শাখাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন শাখাগুলো নতুন মূল ও পাতা সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথক স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদে পরিণত হয়।
২। অযৌন জনন (Asexual reproduction) :
Pteris উদ্ভিদে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় । Pteris উদ্ভিদ পরিণত হলে এর পত্ৰক বা পিনার নিম্নতলের দু’কিনারা বরাবর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পোরাঞ্জিয়া (sporangia , একবচনে sporangium) উৎপন্ন হয়। স্পোরোঞ্জিয়ামে অভ্যন্তরে রেণু বা স্পোর (spore) নামক অযৌন জনন কোষ (asexual reproductive bodies) উৎপন্ন হয়।
স্পোরোঞ্জিয়াগুলো গুচ্ছাকারে অবস্থান করে এবং স্পোরোঞ্জিয়ামের গুচ্ছকে সোরাস (sorus, বহুবচনে sori) বলা হয়। প্রতিটি সোরাস দেখতে বাদামি বর্ণের ও বৃক্কাকার। যে টিস্যু হতে স্পোরোঞ্জিয়াম উৎপন্ন হয় সে টিস্যুকে প্লাসেন্টা (placenta) বা অমরা বলে।
পত্রক বা পিনার কিনারা ভেতরের দিকে একটু বেঁকে এসে সোরাইকে ঢেকে রাখে। ফলক প্রান্তের এ ঢাকনি অংশকে ফলস্ ইন্ডুসিয়াম (false indusium) বলা হয়। সোরাস উৎপন্নকারী পাতাকে স্পোরোফিল (sporophyll) বলে। পরিণত স্পোরোঞ্জিয়াম একটি বৃন্ত (স্পোরাঞ্জিয়োফোর) এবং একটি উপবৃত্তাকার ক্যাপসিউল অংশ নিয়ে গঠিত। বৃন্তের মাথায় ক্যাপসিউল অবস্থিত।
ক্যাপসিউল নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:
অ্যানুলাস (Annulus) : ক্যাপসিউল প্রাচীরের অধিকাংশ কাইটিনযুক্ত ও পুরু এক কোষস্তর বিশিষ্ট আবরণে আবৃত থাকে। এই পুরু আবরণকে অ্যানুলাস বলে। এটি পানিগ্রাহী।
স্টোমিয়াম (Stomium) : ক্যাপসিউলের বৃন্ত সংলগ্ন কিছু অংশে পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট বলয়াকার কোষ থাকে, এ অংশকে স্টোমিয়াম বলে। স্পোর নির্গমনের সময় স্টোমিয়াম বরাবর স্পোরাঞ্জিয়াম ফেটে যায় এবং স্পোর নির্গমন হয়।
বৃন্ত (Stalk) : স্পোরাঞ্জিয়ামের গোড়ায় একটি খাটো বৃন্ত আছে।
স্পোর উৎপাদন ও বিস্তার (Spore production and spread) :
ক্যাপসিউলের ভেতরের টিস্যুকে বলা হয় স্পোরোজেনাস টিস্যু (sporogenous tissue)। এ টিস্যু হতে স্পোর মাতৃকোষ উৎপন্ন হয়। স্পোর মাতৃকোষ ডিপ্লয়েড (2n)। প্রতিটি স্পোরাঞ্জিয়ামে ১৬টি মাতৃকোষ থাকে। মায়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে স্পোর মাতৃকোষ হতে হ্যাপ্লয়েড (n) স্পোর উৎপন্ন হয়। একটি স্পোরাঞ্জিয়াম থেকে ৬৪টি স্পোর সৃষ্টি হয়। পরিণত স্পোরগুলো গাঢ় বাদামি বর্ণের এবং একই বৈশিষ্ট্যের। এগুলো দ্বিস্তরী ও জার্মপোর (germpore) যুক্ত। স্পোর সৃষ্টি হওয়ায় স্পোরাঞ্জিয়ামে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে যায় এবং অ্যানুলাসের কোষগুলো কুঞ্চিত হতে থাকে।
স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে গেলে এর পশ্চাদ্ভাগের অ্যানুলাসে টান পড়ে এবং স্টোমিয়াম আড়াআড়ি ফেটে যায়। আর্দ্র অ্যানুলাস পুনরায় পূর্বস্থানে ফিরে আসে। অ্যানুলাসের এদিক-ওদিক চলাচলের ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম হতে স্পোরের বিস্তার ঘটে এবং স্পোরগুলো বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্যামিটোফাইটিক উদ্ভিদ (Gametophytic plant) :
Pteris এর স্পোরোফাইট থেকে সৃষ্ট স্পোর বা রেণু হলো লিঙ্গধর বা গ্যামিটোফাইটের প্রথম কোষ। হ্যাপ্লয়েড স্পোর অনুকূল পরিবেশে কোনো আর্দ্র বস্তুর সংস্পর্শে আসলে অঙ্কুরিত হয় এবং ক্রমাগত মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডাকার সবুজ অঙ্গের সৃষ্টি করে। এটি ফার্নের গ্যামিটোফাইট। হৃৎপিণ্ডাকার এ গ্যামিটোফাইটকে প্রোথ্যালাস (prothallus) বলা হয়। প্রোথ্যালাসের নিম্নপৃষ্ঠের নিম্নাংশ হতে অনেক এককোষী রাইজয়েড উৎপন্ন হয়। রাইজয়েডগুলো প্রোথ্যালাসকে মাটির সাথে সংযুক্ত করে এবং মাটি হতে প্রোথ্যালাসকে খাদ্যরস সরবরাহ করে। প্রোথ্যালাসের উপরের দিকে একটি গভীর খাঁজ আছে। একে অগ্রস্থ খাঁজ (apical notch) বলে। প্রোথ্যালাস সবুজ বর্ণের, বহুকোষী, স্বতন্ত্র ও স্বভোজী উদ্ভিদ। প্রোথ্যালাস উভলিঙ্গ অর্থাৎ একই দেহে পুং ও স্ত্রী জনন অঙ্গ অবস্থান করে। প্রোথ্যালাসের অঙ্কীয়তলে খাঁজের কাছে স্ত্রীজননাঙ্গ (আর্কিগোনিয়াম) এবং রাইজয়েডের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় পুংজননাঙ্গ (অ্যান্থেরিডিয়াম) উৎপন্ন হয়। একই থ্যালাসে পুং ও স্ত্রী জননাঙ্গ থাকে বলে একে সহবাসী উদ্ভিদও বলা হয়।
৩। যৌন জনন (Sexual reproduction) :
প্রোথ্যালাসে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এর নিম্নতলে খাঁজের কাছাকাছি স্থানে আর্কিগোনিয়াম (স্ত্রীজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়। যে অংশ হতে রাইজয়েড উৎপন্ন হয় সে অংশে অ্যান্থেরিডিয়াম (পুংজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়, কাজেই প্রোথ্যালাস সহবাসী।
আর্কিগোনিয়াম (Archegonium) :
স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়াম ফ্লাস্ক আকৃতির। এটি একটি গ্রীবা (neck) এবং একটি উদর (venter) সহযোগে গঠিত। উদরের নিম্নাংশে একটি ডিম্বাণু (egg or oosphere) আছে এবং ডিম্বাণুর উপর একটি উদরীয় নালিকা কোষ (ventral canal cell) আছে। গ্রীবায় একাধিক গ্রীবা নালিকা কোষ (neck canal cell) আছে। আর্কিগোনিয়াম পরিণত হলে গ্রীবা নালিকা কোষ এবং উদরীয় নালিকা কোষ বিগলিত হয়ে একটি নালী পথ গঠন করে এবং উদরে শুধু ডিম্বাণু থাকে। এই নালী পথটি মিউসিলেজ ও ম্যালিক আসিড দিয়ে পূর্ণ থাকে।
অ্যাস্থেরিডিয়াম (Antheridium) :
পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। অ্যান্থেরিডিয়াম গোলাকৃতির। এর ভেতরে ২০-৫০ টি শুক্রাণু মাতৃকোষ বা অ্যান্ড্রোসাইট (androcyte) থাকে। মাতৃকোষগুলো একটি বন্ধ্যা আবরণ দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। আবরণটি ৩টি কোষ দিয়ে গঠিত। গোড়ায় বলয় কোষ (ring cell) এবং উপরে ১টি ঢাকনা কোষ (cover cell) থাকে। প্রতিটি শুক্রাণু মাতৃকোষ রূপান্তরিত হয়ে প্যাচানো দণ্ডাকার বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণুতে (antherozoid) পরিণত হয়। অ্যান্থেরিডিয়ামের শীর্ষের আচ্ছাদনকারী ঢাকনা কোষ বিদীর্ণ হয় এবং শুক্রাণুগুলো বের হয়ে ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে শিশির বা বৃষ্টির পানিতে সাঁতার কেটে আর্কিগোনিয়ার সন্নিকটে আসে।
নিষেক (Fertilization)
শিশির বিন্দু বা বৃষ্টির পানির সাহায্যে শুক্রাণুসমূহ আর্কিগোনিয়ামে পরিবাহিত হয়। আর্কিগোনিয়াম কতৃক ম্যালিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেক শুক্রাণু আর্কিগোনিয়ামের গ্রীবা নালী দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেও একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। নিষেকক্রিয়ার ফলে ডিপ্লয়েড (2n) উস্পোর (oospore) উৎপন্ন হয়। এভাবে নিষেকের ফলে উস্পোরে পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা ফিরে আসে এবং সাথে সাথে ডিপ্লয়েড বা স্পোরোফাইটিক পর্যায় শুরু হয়।
নতুন স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ (Regeneration of sporophytic plant) :
জাইগোট বা উস্পোর স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ। ঊস্পোর পুনঃ পুনঃ মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে। ভ্রূণ ক্রমশ বিকশিত হয়ে মূল, কাণ্ড ও পাতাবিশিষ্ট নতুন স্পোরোফাইট উদ্ভিদের জন্ম দেয়। মূল মাটিতে প্রবেশের পর প্রোথ্যালাস শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদটি পূর্ণ Pteris উদ্ভিদে পরিণত হয়।
Pteris এর জনুক্রমঃ কোন জীবের জন্মাবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি পর্যায় অতিক্রম করে পুনরায় অবস্থার পূনর্জন দেওয়ার চক্রীয় ধারাকে ঐ জীবের জীবনচক্র বলে। জীবনচক্র সম্পাদনের জন্য একই জীবনে গ্যামেটোফাইটিক জনু (হ্যাপ্লয়েড দশা) এবং স্পোরোফাইটিক জনুর (ডিপ্লয়েড দশা) চক্রাকার আবর্তনকে জনুক্রম বলে Pteris-এর জীবনচক্রে ডিপ্লয়েড (2n) স্পোরোফাইটিক জনু ও হ্যাপ্লয়েড (n) গ্যামেটাফাইটিক জনু পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় বলে এদের জনুক্রম ঘটে । নিচে Pteris এর জনুক্রম-এর বর্ণনা দেয়া হলো ।
স্পোরোফাইটিক জনুঃ নিষেকের পর সৃষ্ট ডিপ্লয়েড উস্পোর হচ্ছে স্পোরোফাইটিক জনুর প্রথম ধাপ । উস্পোর মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে কাণ্ড ও পাতা বিশিষ্ট Pteris উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। পরিণত অবস্থায় Pteris-এর পত্রকের নিচের পিঠে সোরাই উৎপন্ন হয়। প্রতিটি সোরাস কতগুলো স্পোরাঞ্জিয়া বহন করে। প্রতিটি স্পোরাঞ্জিয়ামের ভিতরে ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমবাহী ১৬টি স্পোর মাতৃকোষ উৎপন্ন হয়। স্পোর মাতৃকোষ থেকে মিয়োসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড স্পোর উৎপন্ন হয়।
গ্যামেটোফাইটিক জনুঃ স্পোর উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে গ্যামেটোফাইটিক জনু আরম্ভ হয় । স্পোরগুলো অংকুরিত হয়ে প্রোথ্যালাস গঠন করে যাতে পুরুষ ও স্ত্রী জননাঙ্গ অর্থাৎ অ্যাস্থেরিডিয়া ও আর্কিগোনিয়া উৎপন্ন হয় । পরিণত অবস্থায় প্রতিটি অ্যান্থেরিডিয়াম থেকে অসংখ্য শুক্রাণু এবং প্রতিটি আর্কিগোনিয়াম থেকে মাত্র একটি করে ডিম্বাণু উৎপত্তি লাভ করে ।
নিষেক পদ্ধতির মাধ্যমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে উস্পোর উৎপন্ন হয়। উস্পোর থেকে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। তারপর ধীরে ধীরে স্পোরোফাইটিক জনুর আবির্ভাব ঘটে।স্পোরোফাইটিক দশা দীর্ঘ ও গ্যামেটোফাইটিক দশা বেশ সংক্ষিপ্ত। এবং উভয় দশা আকার-আকৃতিতে ভিন্ন প্রকৃতির ও স্বতন্ত্র। তাই এ এধরনের জনুক্রমকে হিটারোমরফিক জনুক্রম (heteromorphic alternation of generations) বলে।